আজ থেকে এক হাজার বছর পূর্বে, মানুষ শিখে ফেলে বিনিময় প্রথা। এই বিনিময় প্রথা প্রায় ৬০০ বছরে ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়ে সূচনা হয় বাজার ব্যবস্থার। দুরদুরান্ত থেকে আগত ক্রেতা-বিক্রেতা পণ্য বেচা-কেনার জন্য হাকডাক ছেড়ে একে অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন।
১৭৬০ সালের শিল্প বিপ্লবের সূচনা হলে হাটবাজারের ধরণ একটি বদলে যায়। শিল্প বিপ্লবের ফলে শুরু হয় ম্যাস প্রোডাকশন, যার মার্কেটিং তথা বিক্রয় কৌশলেও এর প্রভাব পরে। উৎপাদনকারীরা বিশ্বাস করতেন “simply making the product would sell the product”
বিখ্যাত আমেরিকান মোটর কোম্পানী ফোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড একবার বলেন-
যে কোন কাস্টমার একটি কার কিনতে পারবে, সেই কার যেকোন রঙ দিয়ে পেইন্ট করতে পারবে, যদি সেই কারটির রঙ কালো হয়
বলা বাহুল্য ফোর্ডের নির্মিত সকল গাড়িই তখন কালো রঙের হতো।
কিন্তু হেনরি ফোর্ডের এই তত্ত্ব তো আর সবসময় কাজে লাগবে না! যন্ত্রকৌশল রপ্তের পর মানুষের আয়ের সুযোগ বৃদ্ধি পেল, জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পেল। যার ফলে ‘কঞ্জুমার বিহেভিয়ার’ ধীরে ধীরে পরিবর্তনের ছোয়া আসতে শুরু করলো।
ইতোপূর্বে ব্যবসায়ীরা মার্কেটিং এর জন্য প্রচারমাধ্যম হিসেবে হ্যান্ডবিল, লিফলেট, খবরের কাগজের ব্যবহার করলেও রেডিও ও টেলিভিশন ধীরে ধীরে যখন ম্যাস মিডিয়া বা গণমাধ্যমে রুপ নিল; সোজা ভাষায় ঘরে ঘরে যখন রেডিও ও টেলিভিশনের প্রচলন শুরু হলো তখন মার্কেটিং প্রবেশ করলো তার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। রেডিও, টেলিভশনের অবদানে ব্যবসায়ীরা ম্যাস পিপল টার্গেট করে নিজেদের পণ্য বা সেবার প্রচার শুরু করে দিলেন। মার্কেটিং এর এই কৌশলকে নাম দেয়া হলো ATL বা Above The Line মার্কেটিং।
একুশ শতকে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেল, অর্থ্যাৎ মানুষ যোগাযোগের জন্য টেলিফোন, মোবাইল এর পাশাপাশি ইমেইল এর ব্যবহার শুরু করে দিল। ইমেইলের মাধ্যমে মার্কেটিং শুরু করার ফলে উন্মোচিত হলো BTL বা Below the line মার্কেটিং এর।
কালক্রমে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের ফলে আমরা পুরোপুরি তথ্য প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠলাম। উন্মোচিত হলো মার্কেটিং এর নতুন যুগের “TTL বা Through the line”; যাকে আমরা চিনি ডিজিটাল মার্কেটিং নামে। তবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর পরিসর যতটা কম মনে হয় তার থেকেও কয়েকগুণ বিস্তৃত। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে শুধু Through The Line মার্কেটিংকে বোঝানো হচ্ছেনা, বরং ATL, BTL, TTL একীভূত হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে।
এই যে শুরুতে শিল্প বিপ্লবের কথা বলেছিলাম, সেই বিপ্লবের সর্বশেষ সংযোজন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। ২০১১ সালে শুরু হওয়া শিল্প বিপ্লব এর ফান্ডামেন্টালের মধ্যে অন্যতম ইন্টারনেট অফ থিংস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে, যা ইতোমধ্যে লক্ষ্যনীয়। মার্কেটিং তথা ডিজিটাল মার্কেটিং ও এর ব্যতিক্রম নয়।
যার ফলে ডিজিটাল মার্কেটিং এ যুক্ত হচ্ছে ডেটা এ্যানালিসিস, মার্কেট রিসার্স ইত্যাদি নানাবিধ কৌশল। চলুন একনজরে দেখে নেয়া যাক ডিজিটাল মার্কেটিং এর সর্বশেষ সংযোজন:
অগমেন্টেড রিয়েলিটি এ্যাডস
ভয়েস সার্চ অপ্টিমাইজেশন
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
ইন্টারএ্যাক্টিভ কন্টেন্ট
মাইক্রো মোমেন্ট মার্কেটিং
ইকমার্স ফিচার্ড সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট
প্রাইভেসি সেন্ট্রিক মার্কেটিং
নেক্সট জেন ভিডিয়ো মার্কেটিং
ক্রস চ্যানেল মার্কেটিং
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ২.০ ইত্যাদি
মার্কেটিং এর তৃতীয় প্রজন্ম আগত, এই মূহুর্তে মার্কেটিং ডিজিটাল টুলস, এআই, আইওটি, ডেটা এ্যানালিসিস এর ব্যবহার জানেন এমন একজন দক্ষ মানুষের চাহিদা আকাশচুম্বী। লিংকডিন সার্ভে অনুযায়ী ডিজিটাল মার্কেটিং এ এই মূহুর্তে ৮,৬০০০০ এর মত কাজের সুযোগ আছে এবং এটি সেরা দশটি পেশার মধ্যে অন্যতম এবং ইউএস মার্কেটে একজন ফ্রিল্যান্স ডিজিটাল মার্কেটারের নূন্যতম স্যালারী ২৪০০০ ডলার। ২০২৪ সালে আপওয়ার্কে ডিজিটাল মার্কেটিং ছিল হাইয়েস্ট পেইড জবগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এতসব সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা কেন পিছিয়ে এক্ষেত্রে? এর মূল কারণ হচ্ছে মার্কেট ডিমান্ড অনুযায়ী স্কিল না শেখা। ডিজিটাল মার্কেটিং ৫-৬ বছর আগের সেই “অনলাইন মার্কেটিং কিংবা ইন্টারনেট মার্কেটিং” নেই। বরং ডিজিটাল মার্কেটিং হবে ভবিষ্যতের একমাত্র মার্কেটিং কৌশল।
একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে ডিজিটাল টুলসের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে মার্কেটিং এর ফান্ডামেন্টাল, কাস্টমার সাইকোলজি, ডিজিটাল টুলস (যেমন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ইমেইল ইত্যাদি), ডেটা এনালিসিস, মার্কেটিং ফানেলসহ বিভিন্য বিষয়ের উপর।
আর মার্কেটে এই সময়ে বায়াররা মূলত এইগুলোই চাচ্ছে, যা আমরা দিতে পারছিনা। কল্পনা করেন এই ৮ লক্ষ বায়ার যেই সার্ভিস চাচ্ছে এক্স্যাক্টলি সেই সার্ভিসই যদি তাদের দেয়া যায় খুব হ্যান্ডসাম একটা আয়ের পথ কিন্তু সুগম হয়।